স্বাস্থ্য খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান

ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী

২৬ আগস্ট, ২০২০

বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ছিল—একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে চাই স্বাস্থ্যবান জাতি। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতকে শুধু গুরুত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, ব্যাপক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুই তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে গৃহীত ১০ শয্যার থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বিশ্বে আজও সমাদৃত মডেল।

চিকিত্সক এবং চিকিত্সা খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান

১. সংবিধানে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা পাওয়াকে মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

২. আইপিজিএমআর (সাবেক পিজি) হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হিসেবে স্থাপন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিত্সকরা পোস্টগ্র্যাজুয়েশন করে থাকেন। এই সঙ্গে প্রতিবছর লাখ লাখ রোগীকে উচ্চ মানসম্পন্ন চিকিত্সা প্রদান করা হয়।

৩. বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠা। এই প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিত্সকদের ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।

৪. স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।

৫. ১৯৭৩ সালে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান।

৬. ১৯৭৪ সালে জনস্বাস্থ্য পুষ্টিপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা।

৭. ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ পুষ্টি পরিষদ’ গঠনের আদেশে স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৮. বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা।

৯. চিকিত্সকদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান। আগে যা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় ছিল।

১০. নার্সিংসেবা ও টেকনোলজির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা।

১১. উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল নীতি হলো, ‘Prevention is better then cure’—এ নীতিকে বাস্তবায়ন করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিপসম’ নামের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে রোগ, রোগতত্ত্ব এবং রোগের প্রতিকারবিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

১২. বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) প্রতিষ্ঠা।

১৩. ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।

১৪. জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান স্থাপন।

ওষুধশিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদান

স্বাধীন বাংলাদেশে ওষুধশিল্প ছিল অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। দেশে ৮০ শতাংশের বেশি ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হতো। দেশে যে সামান্য পরিমাণ ওষুধ উত্পাদন হতো, তা-ও বিদেশি ওষুধ কম্পানির নিয়ন্ত্রাধীন ছিল। তা ছাড়া ওষুধশিল্পে সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার অফিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশের মানুষ যেন প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনে এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করা যায় সে লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে দেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিত্সককে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি কমিটি গঠন করান। এই কমিটিকে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন, বিদেশ থেকে আমদানীকৃত ওষুধের মান যাচাই-বাছাই, পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয়। গঠন করা হয় টিসিবির অধীনে একটি ‘ড্রাগ সেল’। মূলত এসব কর্মকাণ্ডই ‘ছায়া ওষুধ নীতি’ হিসেবে কাজ করেছে।

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওষুধের আমদানি কমিয়ে দেশে ওষুধ উত্পাদন বৃদ্ধি এবং ওষুধশিল্পকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য ‘ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর’ গঠন করেন। এ ছাড়া ওষুধের আমদানি কমিয়ে আনতে আগেই গঠিত ‘বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক’ ও ‘বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা’কে নির্দেশ দেন নতুন ওষুধশিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে।

Please Read Full Text From Published Website: https://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2020/08/26/949238